স্বদেশ ডেস্ক:
তিনশ দিন পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায় মুখর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ। তাদের পারস্পরিক কুশল বিনিময় আর শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে যেন প্রাণ ফিরছে শিক্ষায়তনে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিন সরকারি স্কুলগুলোয় নতুন শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য নিতে ভিড় করেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অনলাইনে ফল জেনে কোনো কোনো অভিভাবক এসেছেন
সন্তানের ভর্তি করতে। আবার
কেউ অনলাইনে লটারির ফল না দেখে সরাসরি স্কুলের নোটিশে দেখছেন, প্রিয় সন্তানের ভাগ্য হয়েছে কিনা পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার।
করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ এড়াতে সরকার ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দীর্ঘ ছুটিতে শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্রে জমে ধুলো। শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের পদচারণাহীন নিষ্প্রাণ ছিল স্কুল প্রাঙ্গণ।
গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি ইচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিলা মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, ছেলের ভর্তির তথ্য নিতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে, বেশ আনন্দিত আমরা। প্রায় এক বছর পর স্কুলে আসছি অনেকের সঙ্গে দেখা হলো কুশল বিনিময় করলাম। অন্য রকম এক অনুভূতি।
সরকারি বিজ্ঞান কলেজসংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য লটারিতে বিজয়ী শিক্ষার্থী মীর সৌরভ জানান, গত বছর সপ্তম শ্রেণির ক্লাস বন্ধ হওয়ার পর আর স্কুলে আসা হয়নি। অনেক দিন পর স্কুলে এসে ভালো লাগছে।
তেজগাঁও সরকারি বালিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি ইচ্ছকু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শারমিন দেওয়ান বলেন, এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। অটোপাসে তার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বছর সরকারি এই স্কুলের ভর্তির আবেদন করেছেন।
লটারির ফলে তার নাম এসেছে। পরিবারের সবাই আনন্দিত। ভর্তির তথ্য জানতে এসেছেন স্কুলে।
গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের এক সহকারী শিক্ষক জানান, ১ জানুয়ারি থেকে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ হচ্ছে স্কুলে। সব শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে একই দিন বই দেওয়া হয়নি। পর্যায়ক্রমে বই বিতরণ করা হয়। বই নেওয়ার চেয়ে ভর্তির দিনই শিক্ষার্থীদের বড় অংশ তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে ভর্তির জন্য জড়ো হয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। পারস্পরিক কুশল বিনিময়ে এক অন্যরকম আমেজ তৈরি হয়েছে স্কুলে।
আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে যেন অভিভাবক আর শিক্ষার্থীর মিলনমেলা বসেছে। শিক্ষার্থীরা তার পুরনো সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ চৈ করছেন। শিক্ষার্থীরা একে অন্যের সঙ্গে ছবি-সেলফি তুলতে ব্যস্ত। প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ পেয়ে উচ্ছ্বাসিত তারা। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবাসসুম জানান, কবে স্কুলে ক্লাস করব সেই অপেক্ষা করছি।
দেশে প্রথম করোনা ভারইরাস সংক্রমণের রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। কওমি মাদ্রাসা ব্যতীত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা রয়েছে।
গত বছরজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষা, পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এসএসসির ফল বিলম্বে হলেও প্রকাশ করেছে। তবে এখনো প্রকাশ হয়নি এইচএসসি পরীক্ষার ফল। এ পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প পন্থায় ফল তৈরির ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। শ্রেণি পাঠদানের পরিবর্তে দূরশিখন চালু রেখেছে।